হ্যালো বন্ধুরা, বৃষ্টির সিজন চলে এসেছে। এই সময়ে আপনারা ঘন ঘন মেঘ ডাকতে এবং বাজ পড়তে দেখবেন। যখন বাজ কোন গাছে পড়ে, তখন গাছটা একেবারের জন্য মরে যায়। আর যদি কোন বাড়ির ছাদে বা বাড়ির আশেপাশে কোথাও পড়ে, তাহলে সেই বাড়ির ইলেকট্রিক ইকুইপমেন্টের প্রচুর ক্ষতি হয়।
তবে, সাধারণ মানুষকে এই সমস্যা থেকে বাঁচানোর জন্য যে ইকুইপমেন্টটা ব্যবহার করা হয়, সেটা হলো লাইটনিং অ্যারেস্টর। আজকে এই ARTICLE তে আমরা এই লাইটনিং অ্যারেস্টর সম্পর্কে জানবো। জানবো এগুলো কত ধরনের হয় এবং বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করবো যে এই লাইটনিং অ্যারেস্টর গুলো কাজ কিভাবে করে।
সবার প্রথম প্রশ্ন হলো, লাইটনিং অ্যারেস্টর আসলে কি? লাইটনিং মানে বাংলায় আমরা যাকে বাজ পড়া বা বিদ্যুৎ পড়া বলি, সেটাকে ইংরেজিতে লাইটনিং বলা হয়। আর অ্যারেস্টর, আপনি দেখেছেন বা শুনেছেন যে কোন ক্রিমিনালকে যদি পুলিশ ধরে, তখন বলা হয় যে পুলিশ ক্রিমিনালকে অ্যারেস্ট করেছে। ঠিক সেইভাবেই এই ডিভাইসটা লাইটনিং কে অ্যারেস্ট করে, মানে নিচে পড়ার আগেই ধরে নেয়। তাই এই ডিভাইসটাকে বলা হয় লাইটনিং অ্যারেস্টর।
এবার জানার চেষ্টা করা যাক যে এই লাইটনিং অ্যারেস্টর কত ধরনের হয়। সাধারণত মার্কেটে যে লাইটনিং অ্যারেস্টর গুলো পাওয়া যায়, সেগুলো দু ধরনের হয়। একটা হলো কনভেনশনাল লাইটনিং অ্যারেস্টর এবং দ্বিতীয়টা হলো ইএ লাইটনিং অ্যারেস্টর।
ছোট ছোট বাড়ি বা ফ্ল্যাটে সাধারণত কনভেনশনাল লাইটনিং অ্যারেস্টর ব্যবহার করা হয়। অনেক জায়গায় এই কনভেনশনাল লাইটনিং অ্যারেস্টরকে ফ্র্যাঙ্কলিন রডও বলা হয়। দ্বিতীয় লাইটনিং অ্যারেস্টরের প্রকার হলো ইএসসি লাইটনিং অ্যারেস্টর। ইএসসি মানে আর্লি স্ট্রিমার এমিশন। এটা একটু অ্যাডভান্স টাইপের লাইটনিং অ্যারেস্টর হয়, তাই সাধারণের থেকে এর দামটাও একটু বেশি। খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেমন ধরুন কোন টাওয়ার বা কোন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে এই ধরনের অ্যাডভান্স লাইটনিং অ্যারেস্টর অর্থাৎ ইএসসি অ্যারেস্টর ব্যবহার করতে হয়।
এবার চলুন বোঝার চেষ্টা করা যাক যে এই লাইটনিং অ্যারেস্টর গুলো আসলে কাজ কিভাবে করে। বৃষ্টির সময় সাধারণভাবেই আপনারা আকাশে মেঘ দেখেন। এই মেঘের মধ্যে ছোট্ট ছোট্ট জলের কিংবা বরফের কণিকা থাকে, আর এরা ক্রমাগত একে অপরের সঙ্গে ঘষা খেতে থাকে, যার ফলে মেঘের মধ্যে একটা স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি তৈরি হয়।
আপনারা হয়তো দেখেছেন যে শুকনো চুলেতে চিরুনি ঘষে যদি ছোট ছোট কাগজের গোলার উপর রাখা যায়, তাহলে চুম্বকের মতো ওই চিরনির দিকে কাগজগুলো আকর্ষণ করে। এর কারণ হলো চুলের মধ্যে যখন চিরুনিটা ঘষা হচ্ছিল, তখন ওই চিরুনির মধ্যে একটা স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি তৈরি হয়েছিল, যা চিরুনির সারফেসের উপরে জমা হয়ে থাকে। এই ধরনের স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি কোন বস্তুর সারফেসের উপরে জমা হয়ে থাকে। ঠিক সেইভাবেই মেঘের মধ্যে যখন জল বা বরফের কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষণ করে, তখন ওখানেও একটা স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি তৈরি হয়, যা মেঘের বাইরের দিকে এসে জমা হয়।
তবে মেঘের সারফেসে থাকা এই স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটির মধ্যেও যে পজিটিভ ইলেকট্রন গুলো থাকে, সেগুলো মেঘের উপরের দিকে সাইডে থাকে এবং নেগেটিভ ইলেকট্রন গুলো মেঘের নিচের দিকের সাইডে থাকে। অপরদিকে পৃথিবীর সারফেস সবসময় পজিটিভ থাকে। পৃথিবীর কোর কিন্তু নেগেটিভ, মানে সারফেসটা পজিটিভ, কোরটা নেগেটিভ।
এবার বুঝুন, মেঘের নিচের দিকে যে ইলেকট্রনগুলো জমা হয়ে আছে সেগুলো নেগেটিভ আর পৃথিবীটা পজিটিভ। এক্ষেত্রে কি হতে পারে? স্বাভাবিকভাবেই আপনি বুঝতে পারছেন যে নেগেটিভ ইলেকট্রন গুলো পজিটিভের দিকে আকর্ষিত হবে এবং একে অপরকে নিউট্রালাইজ করার চেষ্টা করবে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে, মেঘের যে জায়গায় প্রচুর পরিমাণে নেগেটিভ ইলেকট্রন জমা হয়ে যায়, তখন বাজ পড়ার রূপে সেটা পৃথিবীতে নেমে আসে।
এই ঘটনাটা অনেকটা ক্যাপাসিটরের মতো। আপনারা হয়তো দেখেছেন যে পুরনো ফ্যানে ব্যাটারির মত দেখতে একটা ডিভাইস লাগানো থাকতো যেটাকে ক্যাপাসিটর বলা হয়। এই ক্যাপাসিটরকে একবার চার্জ করে দিলে, তারপর ক্যাপাসিটরের দুটো তারকে এক জায়গায় আনলে একটা ফ্ল্যাশ হতো। এক্ষেত্রেও ঘটনাটা ঠিক সেরকমই ঘটে। মেঘের মধ্যে থাকা নেগেটিভ ইলেকট্রন গুলো পৃথিবীর পজিটিভের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ হয়ে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রিসিটি একসাথে পৃথিবীতে নেমে আসে, যাকে আমরা বাজপড়া বা বজ্রপাত বলে থাকি।
আর এই বিদ্যুতের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভোল্টেজ থাকে, যে কারণে যেখানে বাজ পড়ে সেই জায়গাটার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং তার সাথে বাড়ির ওপর যদি পড়ে, তাহলে বাড়ির ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে আগুনও লেগে যায়।
তবে অনেক সময় আপনি হয়তো দেখেছেন যে আকাশে মেঘ ডাকে, কিন্তু বাজ পড়ে না। সেক্ষেত্রে কি হয়? দুটো মেঘও একে অপরের সঙ্গে ইলেকট্রন এক্সচেঞ্জ করে। মানে কোন মেঘের নেগেটিভ দিকটা যদি কোন মেঘের পজিটিভ দিকের কাছে চলে আসে, তখন তাদের মধ্যেও ইলেকট্রন এক্সচেঞ্জ হয় এবং একে অপরকে নিউট্রালাইজ করে। আর দুটো মেঘের মধ্যে যখন এরকম ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন তাকে এন্টার ক্লাউড স্ট্রাইক বলা হয়।
এবার যেহেতু এই বিদ্যুতের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভোল্ট থাকে, তাই বাজ পড়লে প্রচুর ক্ষতিও হয়, যেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আপনারা সবাই দেখেছেন, কিছুদিন আগে আপনারা হয়তো খেয়াল করেছিলেন, আমি চ্যানেলে ভিডিও দিতে পারছিলাম না। এর কারণ অন্য কিছু নয়, আমার বাড়ির কাছেই একটা গাছে এরকম বাজ পড়েছিল, যার জন্য আমার কম্পিউটার এবং দুটো ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছিল।
তবে অনেক বাড়িতে কিংবা বড় বড় অফিসে এর থেকেও অনেক দামি দামি ইলেকট্রনিক্স ইকুইপমেন্ট থাকে। আর যদি সেরকম জায়গায় বাজ পড়ে, তবে সেই সমস্ত ইকুইপমেন্ট গুলোকে রিপ্লেস করা অনেক অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ হয়ে যায়। সুতরাং, এই সমস্যার একটা সমাধান বের করার দরকার ছিল, যার থেকেই উঠে আসে লাইটনিং অ্যারেস্টর।
এই লাইটনিং অ্যারেস্টর গুলোকে কোন বাড়ির সবথেকে উঁচু জায়গায় লাগানো হয়। মানে কোন বাড়ির ছাদের উপরেও যদি চিলেকোঠা সবথেকে উঁচু জায়গা হয়, তাহলে লাইটনিং অ্যারেস্টরকে চিলেকোঠার উপরে লাগাতে হবে। মানে বাড়ির সবথেকে উঁচু জায়গা যেটা, সেই জায়গাতে লাগাতে হবে। এই লাইটনিং অ্যারেস্টরটা অন্য কিছু নয়, এটা শুধু বাজ পড়লে তার বিদ্যুৎকে মাটি পর্যন্ত তাড়াতাড়ি যাওয়ার একটা রাস্তা তৈরি করে দেয়, যাতে বাড়ির অন্য কোন জিনিসে ওর এফেক্টটা না পড়ে।
তবে এই লাইটনিং অ্যারেস্টর গুলোকেও যদি আপনি ভালোভাবে ডিটেইলে দেখেন, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে এদের যে মাথাগুলো, সেগুলো ছুঁচালো হয়। এর কারণ হলো ছুঁচালো জায়গাতে সবথেকে বেশি ইলেকট্রন এসে জমা হয়ে থাকে। তাই বজ্রপাত যখন হয়, তখন তারা এই ছুঁচালো জায়গার উপরেই বেশি আকর্ষিত হয়। এর সাথেই ওই লাইটনিং অ্যারেস্টর গুলোকে একটা মোটা তামার তার কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের পাত দিয়ে মাটির সঙ্গে কানেক্ট করা থাকে। একটা গ্রাউন্ড কানেকশন করে দেওয়া থাকে, যাতে বাজ যখন ওই রডের উপর পড়ে, তখন সরাসরি মাটিতে চলে যেতে পারে।
এবার যে সমস্ত হাই ভ্যালু বিল্ডিং আছে, সেই বিল্ডিং গুলোকে বাজপড়া থেকে বাঁচানোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইএ লাইটনিং অ্যারেস্টর ব্যবহার করতে হয়। এর কাজ করার থিওরিটা মোটামুটি একই, কিন্তু একটু ডিফারেন্স আছে। একটু অ্যাডভান্স ভাবে বানানো হয়েছে এই অ্যারেস্টর গুলোকে।
ইএ লাইটনিং অ্যারেস্টর গুলোর মধ্যে একটা সার্কিট এবং একটা ক্যাপাসিটর থাকে। যখন আকাশে মেঘ করে, তখন এনভাইরনমেন্ট থেকে ওই ক্যাপাসিটরটা এনার্জি সঞ্চয় করে এবং ধীরে ধীরে চার্জ হয়ে যায়। তারপর ক্যাপাসিটরের উপরের দিকে যে জায়গাটা আছে, সেখানে কন্টিনিউয়াসলি স্পার্ক হতে থাকে। যার ফলে বজ্রপাত সাধারণ লাইটনিং অ্যারেস্টরের থেকে এই লাইটনিং অ্যারেস্টারে বেশি আকর্ষিত হয়।
সুতরাং, এর থেকে আপনি বুঝতে পারছেন যে কনভেনশনাল লাইটনিং অ্যারেস্টর খুব অল্প জায়গার মধ্যেই কাজ করে। মানে তার খুব কাছাকাছি বাজ পড়লে তবেই সে সেটাকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এই ইএসসি লাইটনিং অ্যারেস্টর অনেক বড় এলাকা জুড়ে কাজ করতে পারে। অপরদিকে, কনভেনশনাল লাইটনিং অ্যারেস্টরের দাম কম, কিন্তু ইএসসি লাইটনিং অ্যারেস্টরের দাম অনেক বেশি।
তো বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই যদি ভালো লাগে তবে অন্যদের সঙ্গে SHARE & COMMENT করে জানাবেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আজকে এই পর্যন্তই আবার দেখা হবে পরের ARTICLE এ ।